সাদ্দাম হোসেন মুন্না স্টাফ রিপোর্টার
পিবিআই তদন্তে হত্যা রহস্য উদঘাটন হিজড়া বোনের হাতে বোন পাপিয়া খুন হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা পিবিআই তদন্তে হত্যা রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। মূলত ত্রিভূজ প্রেমের কারণেই হিজড়া বোন সাম্মি তার বড় বোন পাপিয়াকে গলায় ওনা পেচিয়ে হত্যা করেছে। এ লাশ বোন ও বাবা গুম করতে ব্যর্থ হয়ে আড়াইহাজার থানাধীন শিমুলতলা নামকস্থানে রাস্তার পাশে জঙ্গলের ফেলে দিলে পুলিশ অজ্ঞাত পরিচয় লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হলে পিবিআই তদন্তে এ হত্যার রহস্য উগাটিত হয়। রবিবার (২২ নভেম্বর) দুপুর ১২ টায় সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ পিবিআই কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য জানায় পিবিআই পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম।
পিবিআই জানায়, নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানা পুলিশ চলতি বছরের ২৮ মে অজ্ঞাত নামা এক নারীর লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় আইড়াইহাজার থানায় মামলা (নং- ১৫) হয়। এসময় পিবিআই নারায়ণগঞ্জ জেলার ক্রাইমসিন টিম অজ্ঞাতনামা নারীর লাশের আঙ্গুলের ছাপ গ্রহণের মাধ্যমে ভিকটিমের নাম পরিচয় উদঘাটন করে জানতে পারেন যে মৃত নারীর নাম পাপিয়া বেগম(২০), পিতা- জয়নাল মিয়া, সাং- হলদিপুর, থানা- জগন্নাথপুর, জেলা- সুনামগঞ্জ। আড়াইহাজার থানায় মামলাটি কিছুদিন তদন্তাধীন থাকা অবস্থায় জয়নালকে গ্রেফতার করে। এতেও কোন কুল কিনারা করতে না পারায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর নির্দেশে মামলাটির তদন্ত পিবিআই, নারায়ণগঞ্জ জেলাকে দেয়া হয়। এরপর পিবিআই, নারায়ণগঞ্জ গত ২৩ জুলাই এসআই মোঃ তৌহিদুল ইসলামকে তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করেন। তদন্তের এক পর্যায়ে গত মঙ্গলবার ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে মোঃ আরিফুল ইসলামকে গ্রেফতার করে তদস্তকারী কর্মকর্তা। গ্রেফতারকৃত আরিফুল বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারা মোতাবেক জবানবন্দী প্রদান করেন।
জবানবন্দীতে জানা যায়, মোঃ আরিফুল ইসলামের সাথে পাপিয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু এই সম্পর্ক তার বোন সাম্মি (তৃতীয় লিঙ্গ মর্মে জনশ্রুতি আছে) মেনে নিতে পারেনি। সাম্মি চাইতো মোঃ আরিফুল ইসলাম তার সাথে প্রেমের মাধ্যমে শারিরিক সম্পর্ক গড়ে তুলুক। কিন্তু এই বিষয় পাপিয়া জানতে পারলে দুই জনের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ শুরু হয়। ঘটনারদিন আরিফুল, পাপিয়া এবং তার বোন সাম্মি (তৃতীয় লিঙ্গ মর্মে জনশ্রতি আছে) সবাই সিদ্ধিরগঞ্জের নয়অআটিস্থ পাপিয়ার ভাড়া বাসায় অবস্থান করছিল। দুই জনের ঝগড়ার কারণে আরিফুল তার পরিচিত একই বিল্ডিং এর ২য় তলায় জনৈক সামিয়ার বাসায় অবস্থান করে। কিছুক্ষণ পরে পূনরায় আরিফুল পাপিয়ার ঘরে এসে তার লাশ ঘরের বিছানার উপর দেখতে পায়। এসময় পাপিয়ার গলায় ওড়না পেঁচানো ছিল এবং সাম্মি ঘর থেকে বের হয়ে পালানোর চেষ্টা করছিল।
পরে তারা একজন স্থানীয় ডাক্তারকে ডেকে এনে জানতে পারে পাপিয়া মারা গেছে। সাম্মির মাধ্যমে তার বাবা জয়নাল, পাপিয়ার মৃত্যুর খবর জানতে পেরে ঘটনাস্থলে আসে। পরে ভিকটিমের পিতা জয়নালের পরিকল্পনামতে মোঃ আরিফুল ইসলাম, জয়নালের ছেলে মামুন এবং সাম্মি মিলে মৃত পাপিয়ার লাশ ভৈরব ব্রীজ থেকে নদীতে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনামতে তারা সবাই মিলে একটি এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে মৃত পাপিয়াকে এ্যাম্বুলেন্সে তুলে নিয়ে রওয়ানা হয়। কিন্তু পথিমধ্যে পুলিশের চেক পোষ্ট থাকায় তারা আড়াইহাজার থানাধীন শিমুলতলা নামকস্থানে রাস্তার পাশে জঙ্গলের ভিতরে মৃত পাপিয়ার লাশ ফেলে দিয়ে চলে যায়।
গ্রেফতারকৃত পাপিয়ার পিতা জয়নাল মিয়াকে দুই দিনের পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার পরিকল্পনা মতেই সে সহ তার সহযোগীরা লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে আড়াইহাজার থানাধীন শিমুলতলা নামক স্থানে জঙ্গলের মধ্যে ফেলে গেছে মর্মে বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃকাঃবিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম জানান, মামলার অপরাপর আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যহত রয়েছে।

