সীতাকুণ্ডে অপু জলদাশকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে আত্মহত্যার বলে প্রচার



সুৃমনসেন চট্টগ্রাম প্রতিনিধি-

স্বামী হত্যার বিচারের দাবীতে স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থানার ভাটিয়ারী ইউনিয়নের মীর্জানগর জেলে পাড়ায় অপু বিশ্বাস (২২) হত্যার বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তার পরিবার।

আজ মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্বেলনে নিহত অপু বিশ্বাসের স্ত্রী মাধবী রানী জলদাশ লিখিত বক্তব্যে জানায় তার স্বামী অপু বিশ্বাসকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে প্রচার করে হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করছে খুনিচক্র।

মাধবী রানী জলদাশ বলেন, প্রয়াত ব্যবসায়িক পার্টনারের স্ত্রী সীমা ও তার প্রেমিকের অবৈধ পরকিয়া প্রেমের বলি হয়েছেন আমার নিরাপরাধ স্বামী অপু বিশ্বাস।

স্বামী হত্যার ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমার স্বামী অপু জলদাশ (২২) সীতাকুণ্ড উপজেলা ৯ নং ভাটিয়ারী ইউনিয়নের মির্জানগর, জেলেপাড়ায় গ্রামের নেপাল জলদাশের পুত্র আমার স্বামী দীর্ঘ বেশ কয়েক বছর ধরে একই এলাকার মৃত রতন জলদাশের পরিবারের সাথে যৌথভাবে মাছের ব্যবসা করে আসছিল। এ কারণে রতন জলদাশের পরিবারের সাথে তার বেশ সখ্যতা গড়ে উঠে। রতন জলদাস গত বছর বজ্রপাতে মারা যাওয়ার পর তার তার স্ত্রী সীমা জলদাশ (মামলার ২ নং আসামী) তার মৃত স্বামীর ব্যবসা দেখাশুনা করিত এবং আমার স্বামী অপু জলদাশ সরল বিশ্বাসে তার সাথে পূর্বের ব্যবসায়িত তাকে নিয়মিত সাহায্য সহযোগিতা ও তার বাসায় যাতায়াত করতো। কিন্তু স্বামী রতন জলদাশের মৃত্যুর পর হতে তার (সীমার) আসল চরিত্র ধরা পড়ে। সে রতন জলদাশের আরেক বন্ধু (১নং আসামী) রুবেল জলদাশের সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। আমার স্বামী তাদের অবৈধ সম্পর্কের কথা জেনে যায় এবং বিভিন্ন সময় তাদের আপত্তিকর, অনৈতিক কর্মকাণ্ড দেখে ফেলে। আমার স্বামী ঘরে এসে এ নিয়ে আমার সাথে কথা বলতো। আমি তাকে এসব বিষয়ে এড়িয়ে যেতে বলতাম। কিন্তু প্রয়াত বন্ধু রতন জলদাশের সাথে সম্পর্কের বিষয় চিন্তা করে তাদের দুজনকে অনৈতিক সম্পর্ক থেকে বিরত থাকার জন্য পরামর্শ দিলে তারা আমার স্বমীর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।

তাদের অনৈতিক সম্পর্ক, কুর্কীতি ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়ে তার ধারাবাহিকতায় আমার স্বামীর হত্যাকাণ্ডের দুদিন পূর্বে ১নং আসামী রুবেল জলদাশ ও ৩নং আসামী (সীমার মামাতো ভাই) আকাশ জলদাশ, আসামী সীমা জলদাশের উপস্থিতিতে আমার স্বামী অপু জলদাশকে তাদের সম্পর্কের বিষয়ে মুখ খুললে খুন করে ফেলিবে বলে হুমকি দেয়।

ঘটনার দিন ০৯/০২/২০২০ রাত সাড়ে ৭টার দিকে আমার স্বামী অপু জলদাশ তার নিজের ব্যবহৃত মোবাইল আইফোন ৫ (নাম্বার ০১৮৩৭-১১০৩৫৬) সাথে নিয়ে নিজের ব্যবসায়িক কাজে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। পরে আমি জানতে পারি আমার স্বামীকে আসামী রুবেল জলদাশ সীমা জলদাশের ঘরে ঢেকে নিয়া য়ায়। তখন ঘরে আগে থেকে আসামী আকাশ জলদাশ ও বালি জলদাশ উপস্থিত ছিল। তারা সবাই পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আমার স্বামীকে মুখ চেপে বিছানায় ফেলে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে তারা এ হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে পরিকল্পিতভাবে আসামী সীমা জলদাশের একটি শাড়ি আমার স্বামীর গলায় প্যাচিয়ে রুমের ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচার করে। তখন খবর শুনে আমি ঘটনাাস্থলে গেলে তারা আমাকে আমার স্বামীর কাছে যেতে চাইলে তারা আমাকে বাধা দেয়। পরে আমি জোর করে সে ঘরে ঢুকে দেখতে পাই আমার স্বামী অপুর লাশ সীমা জলদাশের ঘরের ভিতর ফ্যানের সাথে ঝুলনো কিন্তু তার পা দুখানা একটু হাটু ভাঙ্গা ও ল্যাপ্টানে অবস্থায় ঝুলানো আছে।

পরে ঘটনাস্থলে স্থানীয় মেম্বারের উপস্থিতিতে পুলিশ আমার স্বামীর মৃতদেহে বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায় এবং প্রাথমিক সুরতহাল তৈরী করেন।

অপু জলদাশ বলেন, আমার স্বামী রুবেল দাশ আত্মহত্যা করেনি। তাকে অবৈধ প্রেমের কাটা মনে করে পরিকল্পতি সীমা জলদাশ ও রুবেল জলদাশ হত্যা করেছে। আমার বিশ্বাস আমার স্বামী আত্মহত্যা করতে পারে না। আর আত্মহত্যা করার মত কোন কারণও ছিল না। যদি আত্মহত্যাও করে তাহলে সীমার ঘরে কেন আত্মহত্যা করবে ? তাছাড়া ঘটনার দিন আমার প্রথমে সীমার বাড়ীতে গিয়ে দেখি ঘরের দরজা খোলা। যদি আত্মহত্যা করতো তাহলে দরজা ঘরের ভীতর থেকে বন্ধ থাকতো।

মৃত্যুর আগে আমার স্বামী ঘর থেকে জিন্সের শার্ট পরে বেরিয়েছিল। কিন্তু তার যখন ঝুলন্তবস্থায় উদ্ধার করা হয় তখন তার শরীরে জিন্সের শার্টের পরিবর্তে গেঞ্জি ছিল। তাছাড়া তার হাতে থাকা মোবাইল ফোন, স্বর্ণের আংটি, গলার স্বর্ণের চেইন কোথাই তার হদিস এখনো পাওয়া যায়নি।

ঘটনার পরপরই পুলিশ আসার আগেই অভিযুক্ত রুবেল জলদাশ, সীমার ভাই আকাশ পালিয়ে যায়। প্রায় ৫ মাস পলাতক থাকার পর গত জুলাই মাসে স্থানীয় ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার মাঈনুদ্দিনের সহযোগিতায় এলাকায় ফিরে আসে। তারা সহযোগীদের নিয়ে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাা ধামাচাপা দিতে আমাদের নানাভাবে হামলা মামলা ভয়ভীতি চালিয়ে যাচ্ছে। স্বামী মারা যাওয়ার সময় আমি ৬ মাসের গর্ভবতী ছিলাম। পরে আমার সন্তান জন্ম হলেও তারমুখ দেখে যেতে পারিনি অপু দাশ। আমার ৩ বছরের আর একটি সন্তান রয়েছে। স্বামীকে হারিয়ে দু সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে আমি এখন দিশাহারা।তার উপর স্বামী হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে আসামীরা উল্টো আমার আত্মীয় স্বজন অভিভাবকদের মিথ্যা জাল চুরি ও লুটপাটের মামলা দিয়ে হয়রানী করছে। পুলিশ আমার স্বামী হত্যার মামলা না নিয়ে আমাদের থানা থেকে ফিরিয়ে দেয়।

মাধবী জলদাশ আরও বলেন, পুলিশও প্রভাবশালীদের প্ররোচনায় আমার স্বজনদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা নিয়ে আমার মৃত স্বামীর ভাইকে গ্রেফতার করেছে। স্বামীর হত্যার পর মামলা করার জন্য থানায় গিয়ে বার বার অনুনয় বিনয় করার পরও থানায় মামলা নেয়নি। পরে আমরা হত্যার ১০ দিন পর ২০ শে ফেব্রুয়ারী-২০২০ ইংরেজিতে মাননীয় ২য় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত চট্টগ্রামে মামলা করেছি। (সি.আর মামলা নং ৭৫/২০২০)। আদালত মামলা তদন্তের জন্য সীতাকুণ্ড থানাকে নির্দেশ দিলেও এষনও পর্যন্ত এ মামলারও কোন অগ্রগতি নেই।

আমি আমার নিরাপরাধ স্বামী অপু জলদাশ
Share on Google Plus

About alokitochattagramprotidin.com

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.