রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি:
সারাদেশে ইউনিয়ন পরিষদগুলোর মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছরের ২৮ জুলাই। করোনার প্রভাবে ভোট পিছালেও বিগত দুইটি ইউপি নির্বাচনের পূর্ব সময়ের মতো পিছিয়ে নেই রামগঞ্জের ৮নং করপাড়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মজিবুল হক মজিবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা সেই বিতর্কিত ও চিহ্নিত সিন্ডিকেট।
এপ্রসঙ্গে চেয়ারম্যান মজিবুল হক মজিব জানান, ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ শিরোনামসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সাইটে প্রকাশিত ও প্রচারিত সংবাদ আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। উক্ত প্রকাশিত সংবাদগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত হওয়ায় আমি এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। এছাড়াও বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে যে সকল তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আসছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কতিপয় স্বার্থেন্বেষী ব্যক্তি ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার জনপ্রিয়তাকে ক্ষুন্ন করার হীনস্বার্থে এবং সামাজিক মর্যাদা নষ্ট করার জন্য এসব মিথ্যা অভিযোগ আনেন। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে পরিষদের মেয়াদের শেষ পর্যন্ত পরিষদ থেকে সকল সুবিধা নিয়ে এবার নতুন চেয়ারম্যান বানানোর মিশন শুরু করেছে করপাড়ার আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী সিন্ডিকেটের আত্মীয় স্বজন।
এব্যাপারে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সকলের অবগতির জন্য চেয়ারম্যান মজিব বলেন, আমার করপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে বছরে সর্বোচ্চ ট্যাক্স আদায় হয় সাড়ে ছয় লক্ষ টাকা থেকে সাত লক্ষ টাকা। ট্যাক্স আদায়কারীকে বিশ পার্সেন্ট কমিশন বাদ দিয়ে মোট বছরে পরিষদের আয় সর্বমোট প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা। অপরদিকে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের বছরে বেতন বাবদ নয় লক্ষ টাক দিতে হয় এবং জনস্বার্থে ছোট ছোট উন্নয়ন ও আনুষঙ্গিক বিভিন্ন খরচ প্রায় তিন লক্ষ টাকাসহ মোট খরচ বারো লক্ষ টাকা। পরিষদে বছরে আয়ের চেয়ে ব্যয় অনেক বেশি হওয়ায় আমি চেয়ারম্যান এক লক্ষ সত্তর হাজার টাকা বকেয়া বেতন পাওনাসহ বেশিরভাগ ইউপি সদস্যদের বেতনভাতা যথা সময়ে দেয়া সম্ভব হয় না। তাছাড়াও আসন্ন নির্বাচনে আমার সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বি চেয়ারম্যান প্রার্থী তসলিম হোসেনের আত্মীয় ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জনস্বার্থমূলক কাজে বেশিরভাগ সময়ে পরিষদে উপস্হিত থাকেন না। তবে নিজ ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য মাঝে মাঝে পরিষদে হাজির হন। ৭নং ওয়ার্ডের সম্মানিত ইউপি সদস্য গত দুই বছরে একদিনও পরিষদে উপস্হিত হন নাই। তবে আসন্ন নির্বাচনে তার পুত্র রেজাউল করিম সেলিম সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ায় রাজনৈতিক কারনে তারা পিতাপুত্র মিলে নানান রকম মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ এনে আমার জনপ্রিয়তাকে ক্ষুন্ন করার কাজে লিপ্ত আছেন। আসন্ন নির্বাচনে আমার প্রতিপক্ষ চেয়ারম্যান প্রার্থী যুবলীগ সমর্থিত জাহিদ মির্জার আপন বোনজামাই ৯ ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জনস্বার্থমূলক কাজে পরিষদে উপস্হিত না থাকলেও ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য পরিষদে হাজির হতে কার্পণ্য ঈরেন না। এ ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এবং তার ভাই জাকির এবং বাবুর বিরুদ্ধে মাদক বিক্রয় ও সেবনের বহু অভিযোগ আছে। আর ৪/৫/৬ নং ওয়ার্ডে সংরক্ষিত আসনের নারী ইউপি সদস্য বিগত পাঁচ বছরে আমার জানা মতে বেতন-ভাতার জন্য ৫ বার এবং নিজে ব্যক্তিগত কাজে ৫/৬ বার পরিষদে উপস্হিত ছিলেন। আমার জানা মতে তিনি পরিবারসহ ঢাকা থাকেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুল হক মুজিব আরও বলেন, এ সব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। একটি পক্ষ নির্বাচন আসলেই আমার জনপ্রিয়তায় ইর্ষান্বিত হয়ে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত শুরু করে। পরে এর কোন ভিত্তি নেই বলে দাবী তার। তিনি বলেন, ২০১১ ও ২০১৬ সালেও এ ধরণের সম্মেলন করেছে তারা। এরা অপর তিনজন সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীর আত্মীয়-স্বজন। এদের মধ্যে রয়েছে, লিয়াকত উল্যা এর ছেলে রেজাউল করিম সেলিম আগামী নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী, এরকম বেলাল মেম্বারের শ্যালক জাহিদ মির্জা, শাহ আলম মেম্বার এর নিকটতম তসলিম হোসন। এ ছাড়াও যুবদল নেতা জুয়েলের স্ত্রী মরিয়ম বেগম লাইলী। তিনি বলেন, নির্বাচন আসলেই শুরু হয় তাদের ষড়যন্ত্র। এই চারজনসহ আরো চার জন ইউপি সদস্যকে জেলা পরিষদ থেকে বরাদ্ধের নামে স্বাক্ষর নিয়ে জেলা প্রশাসকের বরাবরে অসত্য তথ্য সম্বলিত আবেদন করে ৩১ আগষ্ট ২০২১ তারিখে।
উক্ত অসত্য আবেদনকে পুঁজি করে মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচারের সুদূরপ্রসারী মিশন নিয়ে কাজ করা সিন্ডিকেট তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কতটুকু সফল হবে তা সময়ই বলে দিবে বলে করপাড়ার সূধীমহল অভিমত ব্যক্ত করেছেন। কেননা তর্কিত মুক্তিযোদ্ধা ইউপি সদস্য লকিয়ত উল্যা ও বালু খেকো ইউপি সদস্য বেল্লাল হোসেনদের গ্রহনযোগ্যতা বিগত দিনের মতো বর্তমানেও প্রশ্নবিদ্ধ বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে। মেয়াদ শেষান্তে ইউপি নির্বাচনের পূর্বে এমন সিন্ডিকেট করপাড়ায় নতুন নয় বলেও এলাকায় মুখরোচক আলোচনা চলছে।
প্রশাসনের নিকট সিন্ডিকেটের এমন আবেদন ও মিডিয়ার তৎপরতা বিষয়ে করপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের এক নেতা বলেন- পুরান বোতলে নতুন মদ নিয়ে আর কত খেলবে করপাড়াকে নরকপূরী বানানো নষ্ট সিন্ডিকেটের সদস্যরা? এই খেলা বন্ধ করে দলীয় প্রতীক নৌকা প্রাপ্তির জন্য জেলা ও উপজেলা আওয়ামীলীগসহ তৃণমূল নেতৃবৃন্দের উপর আস্থা রাখার জন্য তিনি আহ্বান জানিয়েছেন।

