ভারত থেকে সন্তানকে ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনের দ্বাঁড়ে দ্বাঁড়ে অভাগী মা



কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ

প্রায় বছর তিনেক আগে অভাবের তাড়নায় দিনমজুর পিতার সাথে ঢাকা যাওয়ার পথে রাস্তায় হারিয়ে যায় ছেলেটি। ছেলেকে হারিয়ে সন্তানের পিতা এখন প্রায় আধা পাগল হয়ে পড়েছে। মাস তিনেক আগে ভারতে ছেলের খোঁজ মেলায় সন্তানকে ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনের দ্বাঁড়ে দ্বাঁড়ে ঘুড়ছেন এক অভাগী মা। সরকারের কাছে সন্তানকে ফিরিয়ে আনার দাবী দরিদ্র বাবা-মায়ের।
ঘটনাটি ঘটেছে কুড়িগ্রাম জেলার সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের মাস্টার পাড়া মাধবরাম কাচিচর গ্রামে বাসিন্দা দিনমজুর সোরাব আলীর(৭০) ও মরিয়ম বেগম(৪২) দম্পত্যির। এক ছেলে ও এক মেয়েসহ চার জনের সংসার।


 নিজের ভিটে মাটি না থাকায় আত্নীয়-স্বজনদের দেয়া ৩/৪শতক জমিতে কোন রকমেই ছাপড়া ঘর তুলে দিন কাটিয়ে দেয় তারা। এরমধ্যেই ২০১৭সালের ভয়াবহ বন্যার পরে অভাবী এলাকায় কর্মহীন হয়ে পড়ে দিনমজুর সোরাব আলী। তাই কাজের সন্ধানে একমাত্র ছেলে মোফাচ্ছেল হক(১৬) কে নিয়ে ঢাকা রওনা দেয়। পথিমধ্যে বাসের যাত্রাবিরতীর সময় সন্তানকে হারিয়ে ফেলেন সোরাব আলী। অনেক খোঁজ-খবর করেও সন্তানের সন্ধান পায়নি পরিবারটি। ফলে সন্তান হারানো শোকে সোরাব আলী আধ পাগল হয়ে পড়ে। দীর্ঘ তিন বছর পরে সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন সূত্রে জানতে পারে তাদের সন্তান বর্তমানে ভারতের আলীপুরদুয়ার বল্লোক কালচিনি জেলার জায়গাও থানার ব্লেস ফাউন্ডেশন রিহ্যাভিলিটিটেশন সেন্টার ফর (ড্রাগ এ্যালকাহোল) ডিপেন্ডেন্ট পারসন,রামগাঁও ফায়ার স্টেশন নিউ রোড জায়গাও-৭৩৬১৮২ স্থানে রয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে সন্তানের বিষয়টি নিশ্চিত হয় পরিবারটি। এরপর থেকে সন্তানকে ফিরিয়ে আনতে লিখিতভাবে জানিয়ে প্রশাসনের দ্বাঁরে দ্বাঁরে ঘুড়ছেন মরিয়ম বেগম।

মরিয়ম বেগম বলেন, কাজের সন্ধানে গিয়ে ছেলেকে হারিয়ে ফেলায় তার বাবা প্রায় পাগল হয়ে গেছে। তখন থেকেই পাগল হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। কোন কাজ কর্ম করতে পারে না সে। অভাবের তাড়না মেয়েটাকে বিয়ে দিয়েছি অনেক আগেই। এখন অন্যের বাড়িতে কাজ করে স্বামী-স্ত্রীর দু’জনের খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে। ছেলেকে অনেক খুঁজেও কোন লাভ হয়নি। কোথাও ছেলের হদিস পাওয়া যায়নি। প্রায় তিন মাস আগে স্থানীয় এক বাসিন্দার আত্নীয় ভারতে থাকে তার মাধ্যমেই আমার মোফাচ্ছেলের সন্ধান আসে। সেই লোক আমার ছেলের সাথে কথা বলে নাম ঠিকানা পাওয়ায় ফেসবুকে ছবি দিলে আমরা তার সাথে ফোনে কথা বলে নিশ্চিত হই। এখন আমি সরকারের কাছে জোড় দাবী করছি আমার বুকের ধনকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করে দেক।

ব্লেস ফাউন্ডেশন রিহ্যাভিলিটিটেশন সেন্টার ফর (ড্রাগ এ্যালকাহোল) ডিপেন্ডেন্ট পারসন সংস্থার জমির মালিক দাদিরাম বসুনিয়া বলেন,আমরা প্রায় ৩বছর আগে পথে পাগল মতো করে এখানে ঘুরছিল। 

এরপর তাকে নিয়ে এসে আমরা লালন-পালন করছি। এখনও আমাদের কাছেই রয়েছে। ছেলেটির কাছ থেকেই ওর বাবা-মায়ের পরিচয় পাই। বাংলাদেশে আমার পরিচিত অনেকের সাথে যোগাযোগ করে ওর বাবা-মায়ের খোঁজ পাওয়া যায়। এই বিষয়ে অনেকের সাথে কথা হলেও কেউ ছেলেটিকে ওর পরিবারের নিকট ফেরত দেবার বিষয়ে উদ্যোগ নেয়নি। দু’রাষ্ট্রের এ্যাম্বাসির মাধ্যমে ফেরত পাঠানো সম্ভব বলে তিনি জানান।

এই বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান জানান, ভুক্তভোগি পরিবারটি আমার ইউনিয়নের বাসিন্দা। ছেলেটি হারিয়ে যাবার প্রায় তিন বছর হলো। পরে আমিও জানতে পারি মোফাচ্ছেল হক ভারতে আটকা আছে। আমি দরিদ্র বাবা-মায়ের হয়ে সরকারের কাছে অনুরোধ করছি তাদের সন্তানকে যেন ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেয়।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন,এই বিষয়ে একটি লিখিত আবেদন পেয়েছি। আমি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। পরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।
Share on Google Plus

About alokitochattagramprotidin.com

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.