আব্দুল করিম চট্টগ্রাম মহানগর প্রতিনিধি
খুনের মামলায় গ্রেপ্তার হন চাক্তাই ভেড়া মার্কেট বস্তির নিয়ন্ত্রক যুবলীগ নেতা আকতার হোসেন
ওরফে কসাই আকতার। সম্প্রতি জামিনে বেরিয়ে ফের সাম্রাজ্য দখলে মরিয়া হয়ে ওঠেন তিনি। সরকারি খাস জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা এ বস্তির অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রক ছিলেন তিনি।
২০২০ সালের ১৭ অক্টোবর ভেড়া মার্কেট বস্তিতে খুন হন আবু তৈয়ব নামে এক ব্যক্তি। চাঁদা না দেওয়ায় আকতারের নির্দেশে বেধড়ক পিটুনি ও উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে তাকে খুন করা হয়েছিল। সেই খুনের মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন আকতার ও তার সহযোগীরা। দীর্ঘদিন জেলে ছিলেন আকতার। আকতার গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার অন্যতম সহযোগীরাও বস্তি ছেড়ে পালিয়ে যান। আকতার জামিনে আসার পর ফিরছেন তার সহযোগীরাও।
মামলায় বলা হয়েছে, তৈয়ব মাছের বোট ও নির্মিতব্য বোটে শ্রমিক (কুলি) সরবরাহ করতেন। শ্রমিকদের নিয়ে থাকার জন্য বস্তিতে একটি ঘর নির্মাণ করেছেন। তৈয়ব আকতারকে ‘চাঁদা’ না দেওয়ায় তাকে খুন করা হয়। আকতার গ্রেপ্তারের পর তার অপরাধ সাম্রাজ্য অনেকটা বন্ধ ছিল।
এ বিষয়ে আকতার হোসেন বলেন, ‘বস্তি এলাকায় এখন কম যাই। পুরোনো বন্ধু-বান্ধবদের অনেকেই চলে গেছে।’
রাজাখালী খালের তীর ও সরকারি খাস জমি দখল করে এ বস্তি গড়ে ওঠে। বর্তমানে নগরীর জলাবদ্ধতা প্রকল্পের অধীনে খালে স্লুইস গেট, রাস্তা নির্মাণ ও খালের সংস্কারের কারণে বস্তি এলাকার অনেক ঘরবাড়ি-দোকান ভেঙে ফেলা হয়। কাজ প্রায় শেষ হয়ে আসার পর ফের খাস জমি দখল ও প্লট বাণিজ্য শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।
যুবলীগ নেতা আকতার হোসেন এ বিষয়ে বলেন, ‘সংস্কার কাজে অর্ধেক বাড়িঘর ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখন কয়েক চায়ের টং বানানো হয়েছে। চাঁদা তোলা ও দখল করার কথা ঠিক নয়। আল্লাহর রহমতে কোনো খারাপ রেকর্ড নেই।’
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ভেড়া মার্কেট বস্তিতে ৩০ একর খাস জমি দখল করা হয়েছে। টিনশেড, সেমিপাকা ঘর ও শুঁটকির মাচাং রয়েছে।
২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ওই বস্তিতে আগুন লেগে নারী ও শিশুসহ আটজন নিহত হয়। ওই সময়ে গঠিত জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি সরকারি খাস জমি দখলমুক্ত করার সুপারিশ করেছিল।
২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন ভেড়া মার্কেট বস্তির ৪৭ জন অবৈধ দখলদারকে দখল ছেড়ে দেওয়ার জন্য উচ্ছেদ নোটিশ দেন। ২৩ ডিসেম্বর সদর সার্কেলের সেই সময়ের সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুজন চন্দ্র রায় অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করেন।
নোটিশে বলা হয়েছিল, নোটিশ পাওয়া ৩০ দিনের মধ্যে সরকারি জায়গা খালি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় খাস জমিতে অবস্থিত ইমারত উচ্ছেদ করে সরকারি জমি দখলমুক্ত করা হবে। একই সঙ্গে দখলদারদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও দায়ের করা হবে।
অবৈধ দখলদারদের মধ্যে বহুল আলোচিত জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি, পুলিশ বক্স (কাঁচা ঘর), সাবেক কাউন্সিলর ও কয়েকজন ব্যবসায়ীর নামও রয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, আকতার হোসেন প্রকাশ কসাই আকতারের নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে বস্তি এলাকায় নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছিল। আকতার ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি ও ভেড়া মার্কেট শ্রমজীবী কল্যাণ সমবায় সমিতির সভাপতি।

